খুলনায় নদীতে ভেসে আসা লাশের পরিচয় শনাক্ত হচ্ছে না, ধরা পড়ছে না খুনিও

জাহিদুল সাগর

খুলনার বটিয়াঘাটা কাজীবাছা নদী থেকে গত সোমবার সকালে অজ্ঞাত পরিচয়ে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিন গভীর রাত পর্যন্ত তার পরিচয় শনাক্ত করতে না পেরে মর্গে প্রেরণ করা হয় মরদেহ। এর ৫ দিন পূর্বে একই স্থান থেকে উদ্ধার করা হয় অপর এক যুবকের বস্তাবন্দি লাশ। লাশ দু’টির শরীরে পচন থাকায় তাদের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় ময়নাতদন্ত শেষে আঞ্জুমান মফিদুলের মাধ্যমে তাদের লাশ দাফন করা হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে অজ্ঞাত পরিচয়ের লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি ভাবিয়ে তুলছে প্রশাসনকে। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে খুলনার নাগরিক নেতারা।

পুলিশ জানায়, গত রবিবার সকাল ১০টার দিকে বটিয়াঘাটা উপজেলার তেতুলতলা কাজীবাছা নদীর তীরে এক ব্যক্তির ভাসমান মরদেহ দেখতে পায় স্থানীয়রা। পরবর্তীতে থানায় বিষয়টি অবগত করা হয়। নদীর ভেতর লাশটি পাওয়ার কারণে থানা নৌপুলিশকে বিষয়টি অবগত করে। লাশের শরীরে কালো রঙের প্যান্ট এবং কলার ওয়ালা গেঞ্জি পরা ছিল।

নৌপুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট করে। পরবর্তীতে পরিচয় শনাক্ত করার জন্য খুলনা পিবিআই এবং সিআইডির বিশেষজ্ঞ টিমকে সেখানে তলব করা হয় কিন্তু শরীরে পচন থাকায় তার পরিচয় জানা যায়নি। ময়না তদন্ত শেষে মরদেহ আঞ্জুমান মফিদুলের মাধ্যমে দাফন করা হয়। এ ঘটনার ৫ দিন পূর্বে একইস্থান থেকে উদ্ধার করা হয় অপর এক যুবকের বস্তাবন্দি লাশ। ওই দিন তেতুলতলা এলাকার বাসিন্দা সানজিদা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ যোগাযোগ করে বিষয়টি অবগত করেন। সেখান থেকে বটিয়াঘাটা থানায় জানানো হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি নৌপুলিশকে জানানো হলে তারা মরদেহ উদ্ধার করে। তারও শরীরে পচন থাকায় পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।

এর আগে ১৪ মে রূপসা সেতুর পশ্চিমপাড়ের নদী থেকে একজন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়।

খুলনা নৌপুলিশ সুপার ডাঃ মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, “অধিক সময় পানিতে থাকার কারণে লাশ দু’টির শরীর এবং হাতের টিস্যু নষ্ট হয়ে যায়। ফিঙ্গার প্রিন্ট মেশিন ব্যবহার করে তাদের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। দেশের সকল থানাকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে কোন উত্তর আসেনি।”

তিনি বলেন, “বস্তাবন্দি লাশের সম্ভাব্য একটি পরিচয় পাওয়া গেছে। অভয়নগর থানায় একটি মিসিং ডায়েরি আছে। সেখানে খোঁজ নেওয়া হয়। কিন্তু তাদের দেওয়া বর্ণনায় মৃত ব্যক্তির শরীরের সাথে মেলে না। ওই বস্তাবন্দি লাশের হাতের টিস্যু নষ্ট হওয়ায় তার পরিচয় শনাক্ত করতে না পেরে কিছু ডিএনএ স্যাম্পল সংগ্রহ করা হয়। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে আসলে বোঝা যাবে উদ্ধার হওয়া লাশগুলো হত্যাকাণ্ডের শিকার না অন্যকিছু।

সুজন খুলনা জেলার সাধারণ সম্পাদক ও বিশিষ্ট নাগরিক নেতা এড. কুদরত-ই-খুদা বলেন, “দেশে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে। রাজনৈতিক বা অন্য কোন কারণে পুলিশ যথাযথভাবে কাজ করতে পারছেন। তাছাড়া রয়েছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। এ সুযোগে এক শ্রেণির মানুষ শত্রুতা করছে। তারা অপরাধ করে পার পাবেন মনে করে। দেশের সার্বিক অবস্থা স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রথমে প্রশাসনের সংস্কার এবং পরে তাদের মানবিক সংস্কারের প্রয়োজন।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন